২০২৫ সালে দুর্গা পুজার সময় সুচি ও দুর্গা পুজার ইতিহাস

২০২৫ সালে দুর্গা পুজা 

সকল সনাতনী ১ টা বছর অপেক্ষা করে দুর্গা পুজার জন্য।এই উৎসব সনাতনীদের প্রধান উৎসব।দেবী দুর্গা এই সময় দেবী দুর্গা স্বর্গ লোক ছেড়ে মর্তের আসেন সকল ভক্তদের দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য। দুর্গা পুজা শুধু ধার্মিক উৎসব বলা ভুল হবে। 

একটি সাংস্কৃতিক সামাজিক ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব বলা হয়। আজকের এই পোস্টে দুর্গাপূজার সকল সময়সূচী সন্ধিপূজা মহালয়া ও দুর্গাপূজার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি। তো চলুন দূর্গা পূজার সকল বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

পেজ সূচিপত্র

২০২৫ সালে দুর্গা পুজা ও মহালয়া দিন ও সময়

২০২৫ সালে দুর্গাপূজা ও মহালয়ার দিন ও সময় হল, একুশে সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হবে ঠিক তার ৭ দিন পর অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর দেবী পক্ষের আগমন হবে। দেবী দুর্গার মর্তে আগমন হয় কারণ সকল অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে শুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটানো এবং নারী শক্তিকে জাগরিত করার জন্য। দুর্গাপূজা হলো সকল সনাতনীদের প্রধান উৎসব।  

আরো পড়ুনঃ ব্লগার ওয়েবসাইটে অর্গানিক ভিজিট বাড়ানোর ৩০ টি উপায়

দুর্গোৎসব প্রতিবছর আশ্বিন মাসে শারদীয় সময়ে শুরু হয়ে থাকে। এই উৎসবকে ঘিরে সকল সোনাতনীরা  আনন্দে মেতে ওঠে। এই সময় সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসা বাড়িতে নাড়ু, মুড়ি মোয়া ইত্যাদি সব খাবারের আয়োজন করা হয়। সকলে আনন্দে মেতে উঠে নতুন নতুন জামা কাপড় কেনে। দুর্গাপূজা ৫ দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে  ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী নবমী, দশমী।

মহালয়ার সাথে দুর্গা পুজার সম্পর্ক

হিন্দু ধর্ম অনুসারে দেবিপক্ষে সূচনা হয় মহালয়া থেকে। মহালয়া হচ্ছে দেবীপক্ষের সূচনা ও পিতৃপক্ষের সমাপ্তি। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী মহালয়ার দিন থেকে দেবী দুর্গাকে আ্নভাব জানানো হয়। সুতরাং মহালয়া সাথে দূর্গা পূজার সম্পূর্ণ রূপে জড়িত। মহালয়া শব্দের আক্ষরিক শব্দ হলো মহৎ আলয় বা মহান আবির্ভাব । 

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী মহালয়া পালন হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে। মহালয়ার এই দিনে তোদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা কর্ম দেওয়া হয়। সময় ভোরবেলায় গঙ্গার ঘাট বা কোন পবিত্র নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে তারপর নোট দেওয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বজনদের শ্রদ্ধা কর্ম জানানো হয়। আবার হিন্দু ধর্ম অনুসারে এটাও বলা হয় যে মহালয়ের দিন দেবী দুর্গা তার চার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তি্‌ গণেশ কে নিয়ে কৈলাস থেকে মরতে আসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। 

মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গাপূজা কিভাবে আবির্ভূত হয়েছে সেটা জানানো হয়। দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করেন এবং তার মহিষাসুর বদ রূপ নিয়েই তাকে পূজাতে করা হয়। মহালয়া ছাড়া দুর্গা পুজা অসম্পূর্ণ। মহালয়া শারদীয় উৎসবের প্রথম সুর তলে

দুর্গা পুজার ইতিহাস

আশ্বিন মাসের শরৎকালের যখন শিউলি ফুলের ঘ্রান বাতাসে ভরে ওঠে তখন দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা শুরু হয়। দেবী দুর্গা হলেন শক্তির দেবী। যা নারী শক্তি থেকে জাগ্রত করার জন্য বিশেষ উপযুক্ত করা হয় । দুর্গাপূজা হচ্ছে সকল সনাতনের আবেগ ও ভালোবাসা। আমরা যে এই দুর্গাপূজা করি তা কোথায় থেকে আবির্ভূত হয়েছে সে সম্পর্কে চলুন যেনে নেয়া যাক। 

হিন্দু ধর্মের পুরান অনুযায়ী মহিষাসুর নামক এক অসুর কে বধ করার জন্য সকল দেবতার  তেজে তাকে সৃষ্টি করা হয়। মহিষাসুর ব্রহ্মা দেবের আরাধনা করে তার থেকে বর লাভ করেন যে কোন দেবতা বা মানব কুলের কেউ তাকে ধ্বংস করতে পারবেন না। এই বরপে মহিষাসুর সকল দেবতাদের উপর অত্যাচার শুরু করে এবং স্বর্গরাজ্যে আক্রমণ চালায়। ব্রহ্মা দেবের বর অনুযায়ী কোন দেবতা তাকে ধ্বংস করতে পারছিলেন না। 

ঠিক তখনই সকল দেবতা একজোট হয়ে তাদের শক্তির তেজে দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করেন। দেবী দুর্গার সৃষ্টি করার পর দেবী মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং যুদ্ধ হওয়ার পর মহিষাসুর পরাজিত হন এবং দেবী দুর্গা তাকে বিনাশ করে। তাকে মহিষাসুর মর্দিনী রূপে পূজিত করা হয়। ঋগ্বেদ মহাভারত ও পুরানে দেবী দুর্গার উল্লেখযোগ্য পাওয়া যায়। 

 সাধারন ভাবে দুর্গা পুজা বসন্তকালে হত তাই সেই পুজা কে বলা হতো বাসন্তী পুজা। তবে পুরান মতে রামচন্দ্র যখন রাবণের সাথে যুদ্ধের আগে শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেন ঠিক তখন থেকেই শরৎকালী দেবী দুর্গার পূজা হয়ে আসছে। এই পুজাকে বলা হয় অকালে বধন। মধ্যযুগে এসে রাজা মহারাজা এবং জমিদারদের প্রভাবে দুর্গাপূজায় আরো জাকজমক হয় পালিত হতে থাকে। 

১৬ শতকের নবদ্বীপের রাজা কংস প্রথম বড় করে দুর্গাপূজা স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে জমিদার কোন রাজাবাড়ির অঙ্গীনায় দুর্গাপূজা এক ঐতিহ্য পরিণত হতে থাকে। তারপর থেকে কলকাতা ও অন্যান্য জায়গায় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রসার ঘটে। বড় বড় পরিবারগুলো বারোয়ারি পূজার আয়োজন করতে থাকে। কলকাতায় প্রথম ১৯১০ সালের দিকে বারোয়ারী সার্বজনীন দুর্গোৎসব পালন করা হয়ে থাকে। 

এরপরে দুর্গোৎসব কেবল রাজা জমিদার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলো না আস্তে আস্তে এই উৎসব সার্বজনীন দুর্গোৎসব হিসেবে পরিচিতি পেল ের ফলে সাধারণ মানুষ এই উৎসব পালন করতে থাকে।

২০২৫ সালে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন

সনাতন ধর্ম শাস্ত্র অনুসারে দেবী দুর্গা কোন বাহনে আগমন ও গমন করছে তা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শুভ ও ওশুভ প্রতীক হিসেবে মানা হয়ে থাকে। শাস্ত্র অনুসারে দেবী দুর্গা এইবার অর্থাৎ ২০২৫ সালে গজে আসছেন, গর্জ অর্থ হলো হাতি। হাতি হচ্ছেন শান্তি ,শক্তি, প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক। দেবী দুর্গার গজ-এ আগমন মানে মতো লোকের জীবনে সুখ-শান্তি আনন্দ মুহূর্ত নেমে আসবে। অর্থাৎ মর্ত্য লোক বাসীদের সকলের জীবনে দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যাবে। দেবীর হাতিতে আগমন মানে কৃষি, ব্যবসা ও সামাজিক জীবন যাপনে অনেক উন্নত আসবে। বেবির হাদীতে আগমন শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের উপর নির্ভর করে শুভ নাকি অশুভ সময় আসছে। এ বছর দেবী দুর্গার গমন হবে দোলা অর্থাৎ পালকিতে যা অশুভ ইঙ্গিত ধরা হয় যেমন মহামারী রোগবালায় ইত্যাদি সবকিছু ছড়িয়ে পড়বে। দেবী দুর্গার ধরলে গমন হলে সমাজে দুঃখ কষ্ট মহামারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সকল সব বিপদ আপদ লেগেই থাকবে। 

দূর্গা পূজার সকল নিয়মাবলী

প্রতিবছর শরৎ ঋতুতে দেবী দুর্গার আহবান দিয়ে এই পূজার শুরু হয় এবং বিজয় দশমী মধ্যে দিয়ে এই পুজার সমাপ্তি হয় । দূর্গা পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন অনেক নিয়মাবলী রয়েছে, এবং সকল নিয়ম ও আজা অনুষ্ঠান মেনেই এই পূজা আয়োজন করা হয়। সকল নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। দুর্গাপূজার আহব্বান শুরু হয় মহালয়ের মধ্য দিয়ে। 

মহালয়ার দিন ভোরবেলায় চন্ডী পাঠ দেবি বন্দা ও দেবীর চক্ষুদান হয়। মহালয়া দিন ভোরে গঙ্গার জল ধুপ প্রদীপ শুদ্ধ নাম জপের মাধ্যমে দেবী দুর্গার আরাধনা করা পুজার অন্যতম নিয়ম। মহালয়ার সাত দিন পর থেকে দেবী দুর্গার বোধন নিয়ম পালন করা হয়। ৫ দিন আমরা দেবী দুর্গার পূজা পালন করে থাকি যেমন ষষ্ঠী পূজা ,সপ্তমী পূজা, অষ্টমী পূজা, নবমী পূজা এবং বিজয় দশমী পূজা এই পূজাতে অনেক নিয়ম নীতি রয়েছে তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।

ষষ্ঠী ও সপ্তমী পূজার আচার ও নিয়মাবলী

ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন ও অধিবাস কাজ সম্পন্ন করা হয়। কলস ও গঙ্গা জলে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই দিন দেবী দুর্গার ঘট উপস্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন সকালে দেবী দুর্গার আরেক রূপ নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে পূজা মন্ডপে আনা হয়।এটি দেবীর প্রাণ প্রতিষ্টার একটি প্রতিক। দেবীর প্রাণ প্রতিষ্টা করে তাকে ধুপ ও প্রদীপ জালইয়ে আরাধনা করা হয়ে থাকে।

মহা অষ্টমী ও সন্ধি পূজার নিয়মাবলী

দুর্গাপূজার বিশেষ দিন হল অষ্টম পূজা এই দিনে সকল ভক্তরা ভোরবেলা থেকে না খেয়ে উপোস থাকে অষ্টমী পূজার শেষ হলে অঞ্জলি দেয়। এই অষ্টমী পূজার সময় বাংলাদেশে অনেক অঞ্চলে কুমারী পূজা করা হয়। কুমারী পূজা মানে পাঁচ থেকে সাত বছরের একটি মেয়েকে কুমারী সাজিয়ে তাকে দেবী রুপে পূজিত করা হয়। তাছাড়া অষ্টমী পূজার শেষে সন্ধিপূজা বিশেষ আয়োজন করা হয়। 

সন্ধি পূজা করার মাধ্যমে দেবী মহিষাসুর বধ এর প্রতীক তুলে ধরা হয়। এই পূজায় .১০৮ টা পদ্মফুল ও ১০৮ টা প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার অনেক অঞ্চলে এই সন্ধিপূজার সময় কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। মহা অষ্টমীর বিশেষ এই পূজার অনেকেই মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করা হয়। দেবী দুর্গা চামুন্ডা রূপে মহিষাসুরকে বধ করার স্মৃতি স্মরণে এই পূজার আয়োজন করা হয়।

নবমী দশমী সকল আচার অনুষ্ঠান

নবমীর দিন দেবী দুর্গী বিরত্বের উপাসনা করা হয়ে থাকে। এই দিন দেবী দুর্গার বিশেষ পূজা আয়োজন করা হয়ে থাকে নবমীর দিন দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে হোম ও অগ্নি যজ্ঞ করা হয়। তাছাড়া নবমীর দিন দেবী দুর্গাকে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। বিভিন্ন পদের মিষ্টি ভোগ ,লুচ্‌ সুজি, পায়েস, খিচুড়ি ইত্যাদি সব ভোগ নিবেদন করা হয়। আবার অনেকেই আছেন যারা নবমীতে দীর্ঘ সময় উপবাস থাকে দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেয়।


দশমীর দিন দেবী দুর্গার বিসর্জন হয় বিসর্জন এর পর দেবী দুর্গা মত্ত লোক থেকে কৈলাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দশমীর ঘট বিসর্জন হয় দুপুর বারোটার মধ্যে। তারপর বিকাল বেলা সকল মহিলারা এসে দেবীকে সিঁদুর পরান ও মিষ্টিমুখ করান। দশমীর দিন সকল মহিলারা একসাথে সিঁদুর খেলেন, একে অপরকে সিঁদুর লাগায় দেন। সিঁদুর খেলা শেষে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের জন্য নদীর ধারে নিয়ে যায়। বিসর্জনের পর থেকেই দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

লেখকের শেষ কথা 

সকল সনাতনীদের অত্যন্ত প্রিয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। এই দূর্গা পূজার জন্য সকল সনাতনী ৩৬০ দিন অপেক্ষা করে এই ৫ দিন আনন্দ করার জন্য তবে ২০২৫ সালে দুর্গা পূজা সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের শুরুতে হবে। এইবার মহালয়া একুশে সেপ্টেম্বর পালন করা হবে যা দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে থাকে। ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিন আলাদা আচার অনুষ্ঠান পালিত হবে। 

পূজা মন্ডপে সকল ভক্তরা সকাল থেকে উপোস থাকে এবং মন্ত্র উচ্চারণ করার মাধ্যমে দেবী দুর্গার অঞ্জলি দিয়ে থাকে। অঞ্জলি দেওয়া শেষ হলে সকলে মিলে একসাথে প্রসাদ গ্রহণ করে । দুর্গাপূজার শুধু সনাতনীদের ধর্মীয় উৎসব নয় বরং এটি সকল বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক উৎসব। এই পূজার সময় সকলে আত্মীয়-স্বজন একসাথে হয়। এই পূজা নারী শক্তির উদ্বোধন ঘটায় ও অশুভ শক্তি বিনাশ করে। দেবী দুর্গা হলেন শক্তির দেবী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url